Preaching Authentic Islam in BanglaGY39ZTK8


৭. ইশরাক্ব ও চাশতের ছালাত (صلاة الإشراق والضحى)
‘শুরূক্ব’ অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ‘ইশরাক্ব’ অর্থ চমকিত হওয়া। ‘যোহা’ অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়। এই ছালাত বাড়ীতে পড়া ‘মুস্তাহাব’। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন।[1]
ফযীলত : আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও ওমরাহর নেকী হয়।[2] ইমাম নববী বলেন, ‘ইবনু ওমর (রাঃ) ছালাতুয যোহাকে বিদ‘আত বলেছেন’ তার অর্থ হ’ল, এটি নিয়মিত মসজিদে পড়া বিদ‘আত।[3] বুরাইদা আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হ’ল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী? তিনি বললেন, চাশতের দু’রাক‘আত ছালাতই এজন্য যথেষ্ট।[4] চাশতের ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাক‘আত পড়েছিলেন।[5] প্রতি দু’রাক‘আত অন্তর সালাম ফিরাতে হয়।
উল্লেখ্য যে, দুপুরের পূর্বের এই ছালাতকেই ‘ছালাতুল আউওয়াবীন’ বলে।[6] মাগরিবের পরের ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল ছালাতকে আউওয়াবীন বলার হাদীছগুলি যঈফ। [7]

[1] . মির‘আত শরহ মিশকাত ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮; ৪/৩৪৪-৫৮।
[2] . তিরমিযী হা/৫৮৬, মিশকাত হা/৯৭১ ‘ছালাতের পরে যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[3] . মির‘আত ৪/৩৪৬।
[4] . আবুদাঊদ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
[5] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩০৯ ‘ছালাতুয যোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
[6] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মির‘আত ৪/৩৫১।
[7] . তিরমিযী, মিশকাত ১১৭৩-৭৪, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭।

৮. সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ছালাত (صلاة الكسوف والخسوف)
সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ কালে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ছালাতুল কুসূফ ও খুসূফ বলা হয়। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ আল্লাহ্র অপার কুদরতের অন্যতম নিদর্শন। এই গ্রহণ শুরু হ’লে আল্লাহ্র প্রতি গভীর আনুগত্য ও ভীতি সহকারে এর ক্ষতি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত দীর্ঘ ক্বিরাআত ও ক্বিয়াম সহকারে আদায় করতে হয় এবং শেষে খুৎবা দিতে হয়।[1] এই ছালাতের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। যাতে দু’রাক‘আত ছালাতে (২+২) ৪টি রুকূ হয় এবং এটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ।[2]
পদ্ধতি : আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সময়ে একবার সূর্য গ্রহণ হ’লে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ) ছালাত আদায় করেন ও লোকেরাও তাঁর সাথে ছালাত আদায় করে। প্রথমে তিনি ছালাতে দাঁড়ালেন এবং সূরা বাক্বারাহ্র মত দীর্ঘ ক্বিরাআত করলেন। অতঃপর (১) দীর্ঘ রুকূ করলেন। তারপর মাথা তুলে ক্বিরাআত করতে লাগলেন। তবে প্রথম ক্বিরাআতের চেয়ে কিছুটা কম ক্বিরাআত করে (২) রুকূতে গেলেন। এবারের রুকূ প্রথম রুকূর চেয়ে কিছুটা কম হ’ল। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে সিজদা করলেন। অতঃপর সিজদা শেষে তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং লম্বা ক্বিরাআত করলেন। তবে প্রথমের তুলনায় কিছুটা ছোট। এরপর তিনি (৩) রুকূ করলেন, যা আগের রুকূর চেয়ে কম ছিল। রুকূ থেকে মাথা তুলে পুনরায় ক্বিরাআত করলেন। যা প্রথমের তুলনায় ছোট ছিল। অতঃপর তিনি (৪) রুকূ করলেন ও মাথা তুলে সিজদায় গেলেন। পরিশেষে সালাম ফিরালেন।
ইতিমধ্যে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। অতঃপর ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি খুৎবা দিলেন এবং হামদ ও ছানা শেষে বললেন যে, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের মধ্যে দু’টি বিশেষ নিদর্শন। কারু মৃত্যু বা জন্মের কারণে এই গ্রহণ হয় না। যখন তোমরা ঐ গ্রহণ দেখবে, তখন আল্লাহকে ডাকবে, তাকবীর দিবে, ছালাত আদায় করবে ও ছাদাক্বা করবে। … আল্লাহ্র কসম! আমি যা জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’লে তোমরা অল্প হাসতে ও অধিক ক্রন্দন করতে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ভয় দেখিয়ে থাকেন। অতএব যখন তোমরা সূর্য গ্রহণ দেখবে, তখন ভীত হয়ে আল্লাহ্র যিকর, দো‘আ ও ইস্তেগফারে রত হবে। [3]
বিজ্ঞানের যুক্তি : সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের সময় চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় চলে আসে। ফলে সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণী শক্তি বেশী মাত্রায় পৃথিবীর উপরে পতিত হয়। এর প্রচন্ড টানে অন্য কোন গ্রহ থেকে পাথর বা কোন মহাজাগতিক বস্ত্ত পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে পৃথিবী ধ্বংসের একটা কারণও হ’তে পারে। ১৯০৮ সালের ৩০ শে জুন ১২ মেগাটন টিএনটি ক্ষমতা সম্পন্ন ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বিশালাকার জ্বলন্ত পাথর (মিটিওরাইট) রাশিয়ার সাইবেরিয়ার জঙ্গলে পতিত হয়ে ৪০ মাইল ব্যাস সম্পন্ন ধ্বংসগোলক সৃষ্টি করেছিল। আগুনের লেলিহান শিখায় লক্ষ লক্ষ গাছপালা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল।[4]
‘কুসূফ’ ও ‘খুসূফ’-এর ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব হ’তে আল্লাহ্র নিকটে পানাহ চাওয়া হয়। এই ছালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হ’ল, আল্লাহ্র এই সব সৃষ্টিকে পূজা না করা এবং ভয় না করা। আল্লাহ বলেন,
لاَ تَسْجُدُوْا لِلشَّمْسِ وَلاَ لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوْا ِللهِ الَّذِيْ خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
‘তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও না। বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন। যদি তোমরা সত্যিকার অর্থে তাঁরই ইবাদত করে থাক’ (হা-মীম সাজদাহ/ফুছছিলাত ৪১/৩৭)।

[1] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮২-৮৩, ‘চন্দ্র গ্রহণের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৫০।
[2] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮০, ৮২, টীকা-আলবানী দ্রঃ পৃঃ ১/৪৬৯; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫।
[3] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৮২-৮৪। উল্লেখ্য যে, ঘটনাক্রমে সূর্য গ্রহণের দিন নবীপুত্র ইবরাহীম ১৮ মাস বয়সে মদীনায় ইন্তেকাল করেন (১০ম হিজরী ২৯ শাওয়াল সোমবার ২৭শে জানুয়ারী ৬৩২ খৃঃ)। সে সময় আরবদের মধ্যে ধারণা প্রচলিত ছিল যে, উচ্চ সম্মানিত কোন মানুষের মৃত্যুর কারণেই সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়ে থাকে’ (বুখারী হা/১০৬৩, ‘কুসূফ’ অধ্যায় ১৭ অনুচ্ছেদ; মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৮৫; সুলায়মান মানছূরপুরী, রহমাতুল লিল আলামীন (দিল্লী : ১৯৮০ খৃঃ) ২/৯৭-৯৮ পৃঃ।
[4] . ঢাকা, দৈনিক ইনকিলাব, ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ২০০০, পৃঃ ১১। উল্লেখ্য যে, ১০ লাখ টনে এক মেগাটন হয়।

৯. ছালাতুল ইস্তিস্ক্বা (صلاة الإستسقاء)
ইস্তিস্ক্বা অর্থ : পান করার জন্য পানি প্রার্থনা করা। শারঈ পরিভাষায় ব্যাপক খরা ও অনাবৃষ্টির সময় বিশেষ পদ্ধতিতে ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে পানি প্রার্থনা করাকে ‘ছালাতুল ইস্তিস্ক্বা’ বলা হয়। ৬ষ্ঠ হিজরীর রামাযান মাসে সর্বপ্রথম মদীনায় ইস্তিসক্বার ছালাতের প্রবর্তন হয়।[1]
বিবরণ : মলিন ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরে চাদর গায়ে দিয়ে বিনয়-নম্র চিত্তে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ময়দান অভিমুখে রওয়ানা হবে। সাথে ইমামের জন্য মিম্বর নিতে পারবে। অতঃপর নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতি অবলম্বনে ইস্তিসক্বার ছালাত আদায় করবে।
পদ্ধতি-১ : ঈদের ছালাতের ন্যায় আযান ও ইক্বামত ছাড়াই প্রথমে জামা‘আত সহ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।[2] ইমাম সরবে ক্বিরাআত করবেন। প্রথম রাক‘আতে সূরা আ‘লা ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা গাশিয়াহ কিংবা অন্য যে কোন সূরা পড়বেন। অতঃপর ছালাত শেষে ইমাম মিম্বরে বসে বা দাঁড়িয়ে অথবা মিম্বর ছাড়াই মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লা-হু আকবর, আলহামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আলামীন ওয়াছ ছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ শেষে মুছল্লীদের প্রতি ইস্তিস্ক্বার গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমান বর্ধক উপদেশসহ সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। [3] অতঃপর ইমাম ও মুক্তাদী সকলে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে স্ব স্ব চাদর উল্টাবে। অর্থাৎ চাদরের নীচের অংশ উপরের দিকে উল্টে নিবেন এবং চাদরের ডান পাশ বাম কাঁধে ও বাম পাশ ডান কাঁধে রাখবে। অতঃপর দু’হাত উপুড় অবস্থায় সোজাভাবে চেহারা বরাবর উঁচু রাখবে, যেন বগল খুলে যায়। [4]
অতঃপর নিম্নের দো‘আ সমূহ পাঠ করবেন-
(1) اَلْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ، مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ يَفْعَلُ مَا يُرِيْدُ- اَللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ عَلَيْنَا قُوَّةً وَّ بَلاَغًا إِلَى حِيْنٍ-
(১) উচ্চারণ : আলহামদুলিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন, আররহমা-নির রহীম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ইয়াফ‘আলু মা ইউরীদু। আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা। আনতাল গানিইয়ু ওয়া নাহ্নুল ফুক্বারা-উ। আনঝিল ‘আলায়নাল গায়ছা ওয়াজ‘আল মা আনঝালতা ‘আলায়না কুউওয়াতাঁও ওয়া বালা-গান ইলা হীন।
অনুবাদ: সকল প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। যিনি করুণাময় ও কৃপানিধান। যিনি বিচার দিবসের মালিক। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি যা ইচ্ছা তাই-ই করেন। হে প্রভু! আপনি আল্লাহ। আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আপনি মুখাপেক্ষীহীন ও আমরা সবাই মুখাপেক্ষী। আমাদের উপরে আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন! যে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তা যেন আমাদের জন্য শক্তির কারণ হয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়’।[5]
(2) اَللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَاحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ-
(২) উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাস্ক্বে ‘ইবা-দাকা ওয়া বাহা-এমাকা ওয়ানশুর রহমাতাকা ওয়াহ্ইয়ে বালাদাকাল মাইয়েতা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি পান করান আপনার বান্দাদেরকে ও জীবজন্তু সমূহকে এবং আপনার রহমত ছড়িয়ে দিন ও আপনার মৃত জনপদকে পুনর্জীবিত করুন’। [6]
(3) اَللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُّغِيْثًا مَّرِيْئًا مَّرِيْعًا، نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ-
(৩) উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাসক্বেনা গায়ছাম মুগীছাম মারীআম মারী‘আ, না-ফে‘আন গায়রা যা-র্রিন ‘আ-জেলান গায়রা আ-জেলিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এমন বৃষ্টি দান করুন, যা চাহিদা পূরণকারী, পিপাসা নিবারণকারী ও শস্য উৎপাদনকারী। যা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারী এবং যা দেরীতে নয় বরং দ্রুত আগমনকারী’।[7]
এই সময় বৃষ্টি দেখলে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)।[8] বৃষ্টিতে চাদর ভিজিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত মনে করে আগ্রহের সাথে তা বরণ করে নিতে হবে। [9]
পদ্ধতি-২ : প্রথমে সংক্ষিপ্ত খুৎবা দিবেন। অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবেন।[10] অতঃপর দাঁড়িয়ে পূর্বে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী দো‘আ করতে থাকবেন।
তাৎপর্য : চাদর উল্টানোর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যেন খরা উল্টে গিয়ে বৃষ্টিপাত হয়।[11] এছাড়াও রয়েছে রাজাধিরাজ আল্লাহর সামনে বান্দার পরিবর্তিত অসহায় অবস্থার ইঙ্গিত। দাঁড়িয়ে দু’হাত উপুড় ও সোজাভাবে ধরে রাখার মধ্যে রয়েছে পালনকর্তা আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ ও একান্তভাবে আত্মনিবেদনের ইঙ্গিত। ময়দানে বেরিয়ে একত্রিত হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে একই বিষয়ে হাযারো বান্দার ঐকান্তিক প্রার্থনার গুরুত্ববহ ইঙ্গিত।
ছালাত ব্যতীত অন্যভাবে বৃষ্টি প্রার্থনা :
(ক) জুম‘আর খুৎবা দানের সময় খত্বীব দু’হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করবেন। একই সাথে মুছল্লীগণ হাত উঠিয়ে দো‘আ করবেন (অথবা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলবেন)। এ সময়ের সংক্ষিপ্ত দো‘আ হ’ল اَللَّهُمَّ اَغِثْنَا আল্লা-হুম্মা আগিছনা (হে আল্লাহ! আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন) কমপক্ষে ৩ বার।[12] অথবা اَللَّهُمَّ اسْقِنَا আল্লা-হুম্মাস্ক্বেনা (হে আল্লাহ! আমাদেরকে পানি পান করান) কমপক্ষে ৩ বার। [13]
(খ) জুম‘আ ও ইস্তিসক্বার ছালাত ছাড়াই স্রেফ দো‘আর মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। এ সময় দু’হাত তুলে বর্ণিত ৩নং দো‘আটি ও অন্যান্য দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। [14]
অন্যান্য জ্ঞাতব্য :
(ক) জীবিত কোন মুত্তাক্বী পরহেযগার ব্যক্তির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর চাচা আববাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে ওমর (রাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন।[15] কিন্তু কোন মৃত ব্যক্তির দোহাই বা অসীলা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা যাবেনা। কারণ এটি হ’ল সবচেয়ে বড় শিরক।
(খ) ইস্তিস্ক্বার খুৎবা সাধারণ খুৎবার মত নয়। এটির সবটুকুই কেবল আকুতিভরা দো‘আ আর তাকবীর মাত্র। [16]
(গ) অতিবৃষ্টি হ’লে বলবে, اَللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا আল্লা-হুম্মা ছাইয়েবান না-ফে‘আন (হে আল্লাহ! উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন)। [17] আর তাতে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দিলে তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করে বলবে, اَللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَاআল্লা-হুম্মা হাওয়া-লায়না অলা ‘আলায়না (হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও। আমাদের উপর দিয়ো না)। [18]

[1] . মির‘আত ৫/১৭০।
[2] . আবুদাঊদ হা/১১৬১, ৬৫; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৯৭; মির‘আত ৫/১৭৯।
[3] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে; বুখারী হা/১০২২ ‘দাঁড়িয়ে ইস্তিস্কার দো‘আ পাঠ’ অনুচ্ছেদ-১৫; মির‘আত ৫/১৮৯।
[4] . আবুদাঊদ হা/১১৬৪, ৬৮; ঐ, মিশকাত হা/১৫০৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৬১; মির‘আত ৫/১৭৬।
[5] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিস্কা’ অনুচ্ছেদ-৫২।।
[6] . মুওয়াত্ত্বা, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৬ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ইস্তিস্ক্বা’ অনুচ্ছেদ-৫২।
[7] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫০৭।
[8] . বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।
[9] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৫০১।
[10] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫, ৭৩; মিশকাত হা/১৫০৮; মির‘আত ৫/১৭৮।
[11] . হাকেম, বায়হাক্বী, মির‘আত ৫/১৭৬।
[12] . বুখারী হা/১০১৪, ১০২৯ ‘ইস্তিসক্বা’ অধ্যায়-১৫, অনুচ্ছেদ-৭, ২১।
[13] . বুখারী হা/১০১৩, অনুচ্ছেদ-৬।
[14] . ইবনু মাজাহ হা/১২৬৯।
[15] . বুখারী হা/১০১০, মিশকাত হা/১৫০৯।
[16] . আবুদাঊদ হা/১১৬৫।
[17] . বুখারী হা/১০৩২, মিশকাত হা/১৫০০।
[18] . বুখারী হা/৯৩৩, ১০২১; আবুদাঊদ হা/১১৭৪; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৯০২, অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৭

১০. ছালাতুল হাজত (صلاة الحاجة)
বিশেষ কোন বৈধ চাহিদা পূরণের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে যে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল হাজত’ বলা হয়।[1] সঙ্গত কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য বান্দা স্বীয় প্রভুর নিকটে ছবর ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৫৩)। এজন্য শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে আশু প্রয়োজনীয় বিষয়টির কথা নিয়তের মধ্যে এনে নিম্নোক্ত সারগর্ভ দো‘আটি পাঠ করবে।
اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-
(আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খেরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র)। ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন ও আখেরাতে মঙ্গল দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা করুন’। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় এ দো‘আটিই পড়তেন’।[2]
দো‘আটি সিজদায় পড়লে বলবে, اَللَّهُمَّ آتِنَا… আল্লা-হুম্মা আ-তিনা…। কেননা রুকূ-সিজদায় কুরআনী দো‘আ পড়া চলে না। [3]
হুযায়ফা (রাঃ) বলেন,
كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا حَزَبَهُ أَمْرٌ صَلَّى
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন ছালাতে রত হ’তেন’।[4]
উক্ত বিষয়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী সারা’র ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে। যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিসরের লম্পট সম্রাটের নিকটে নীত হলেন ও অত্যাচারী সম্রাট তার দিকে এগিয়ে গেল, তখন তিনি ওযূ করে ছালাতে রত হয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেছিলেন,
اَللَّهُمَّ لاَ تُسَلِّطْ عَلَىَّ هَذَا الْكَافِرَ
‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করোনা’। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং উক্ত লম্পটের হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল। তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সে বিবি সারা-কে সসম্মানে মুক্তি দেয় এবং বহুমূল্যবান উপঢৌকনাদি সহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহীমের নিকট পাঠিয়ে দেয়।[5]

[1] . ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৫, ছালাত অধ্যায়-২ অনুচ্ছেদ-১৮৯।
[2] . বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২৪৮৭, মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩।
[3] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৭৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩; নায়ল ৩/১০৯।
[4] . আবুদাঊদ হা/১৩১৯ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৩১২; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭০৩; ঐ, মিশকাত হা/১৩১৫।
[5] . বুখারী হা/২২১৭ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-৩৪, অনুচ্ছেদ-১০০; আহমাদ হা/৯২৩০, সনদ ছহীহ।

১১. ছালাতুত তাওবাহ (صلاة الةوبة)
অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুত তাওবাহ’ বলা হয়। আবুবকর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন লোক যদি গোনাহ করে। অতঃপর উঠে দাঁড়ায় ও পবিত্রতা অর্জন করে এবং দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।[1] ত্বাবারাণী কাবীরে ‘হাসান’ সনদে আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে ‘মরফূ’ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত ছালাত দুই বা চার রাক‘আত ফরয কিংবা নফল পূর্ণ ওযূ ও সুন্দর রুকূ-সিজদা সহকারে হ’তে হবে। [2] তওবার জন্য নিম্নের দো‘আটি বিশেষভাবে সিজদায় ও শেষ বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে পাঠ করা উচিত।-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ-
উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে। অনুবাদ : ‘আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি সেই আল্লাহর নিকটে যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্ব চরাচরের ধারক এবং তাঁর দিকেই আমি ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’।[3] ‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার’ দো‘আটিও এর সাথে যোগ করা ভাল (দ্র: দো‘আ নং ১৩)।

[1] . আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, তিরমিযী, হাদীছ হাসান; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৯; মিশকাত হা/১৩২৪ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; আলে ইমরান ৩/১৩৫।
[2] . ত্বাবারাণী কাবীর, আহমাদ হা/২৭৫৮৬; ছহীহাহ হা/৩৩৯৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৩০।
[3] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।

১২. ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ (صلوة الإسةخارة)
আল্লাহর নিকট থেকে কল্যাণ ইঙ্গিত প্রার্থনার জন্য যে নফল ছালাত আদায় করা হয়, তাকে ‘ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ’ বলা হয়। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় কোন্ শুভ কাজটি করা মঙ্গলজনক হবে, সে বিষয়ে আল্লাহর নিকট থেকে ইঙ্গিত পাওয়ার জন্য বিশেষভাবে এই ছালাত আদায় করা হয়। কোন দিকে ঝোঁক না রেখে সম্পূর্ণ নিরাবেগ ও খোলা মনে ইস্তেখারার ছালাত আদায় করবে। অতঃপর যেদিকে মন টানবে, সেভাবেই কাজ করবে। এ জন্য ফরয ছালাত ব্যতীত ইস্তেখারার নিয়ত সহ দু’রাক‘আত নফল ছালাত দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে পড়া যায়।
ইস্তেখারার দো‘আ এক রাক‘আত বিশিষ্ট বিতর ছালাতে পড়া উচিত নয়। বরং এক-এর অধিক রাক‘আত বিশিষ্ট বিতরে বা যে কোন সুন্নাত-নফলে পড়া যায়। [1]
জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে সকল কাজে ‘ইস্তেখা-রাহ’ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলেছেন, তোমদের কেউ যখন কোন কাজের সংকল্প করবে, তখন ফরয ব্যতীত দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। অতঃপর বলবে।-
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوْبِ، اَللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ خَيْرٌ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاقْدِرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الْأَمْرَ شَرٌّ لِّيْ فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ وَاقْدِرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِيْ بِهِ، قَالَ: (وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ)- رواه البخارىُّ-
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়া আস্তাক্বদিরুকা বি ক্বুদরাতিকা, ওয়া আসআলুকা মিন ফাযলিকাল ‘আযীম। ফাইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়া লা আক্বদিরু, ওয়া তা‘লামু ওয়া লা আ‘লামু, ওয়া আনতা ‘আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খায়রুল লী ফী দ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী, ফাক্বদিরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী; ছুম্মা বা-রিক লী ফীহি। ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শার্রুল লী ফী দ্বীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী, ফাছরিফহু ‘আন্নী ওয়াছরিফনী ‘আনহু, ওয়াক্বদির লিয়াল খায়রা হায়ছু কা-না, ছুম্মা আরযিনী বিহী।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার জ্ঞানের সাহায্যে কল্যাণের বিষয়টি প্রার্থনা করছি এবং তোমার শক্তির মাধ্যমে (সেটা অর্জন করার) শক্তি প্রার্থনা করছি। আমি তোমার মহান অনুগ্রহ ভিক্ষা চাইছি। কেননা তুমিই ক্ষমতা রাখ। আমি ক্ষমতা রাখি না। তুমিই জানো, আমি জানি না। তুমিই যে অদৃশ্য বিষয় সমূহের মহাজ্ঞানী।
হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, এ কাজটি আমার জন্য উত্তম হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে ওটা আমার জন্য নির্ধারিত করে দাও এবং সহজ করে দাও। অতঃপর ওতে আমার জন্য বরকত দান কর।
আর যদি তুমি জানো যে, এ কাজটি আমার জন্য মন্দ হবে আমার দ্বীনের জন্য, আমার জীবিকার জন্য ও আমার পরিণাম ফলের জন্য, তাহ’লে এটা আমার থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকেও ওটা থেকে ফিরিয়ে রাখ। অতঃপর আমার জন্য মঙ্গল নির্ধারণ কর, যেখানে তা আছে এবং আমাকে তা দ্বারা সন্তুষ্ট কর’।
এখানে হা-যাল আম্রা (এই কাজ) বলার সময় কাজের নাম উল্লেখ করা যায় বলে রাবী বর্ণনা করেন। যা উপরোক্ত হাদীছের শেষে বর্ণিত হয়েছে। [2]
দো‘আর সময়কাল :
এখানে দো‘আটি কখন পড়বে, সে বিষয়ে দু’টি বিষয় প্রতিভাত হয়। ১. জাবের (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর হাদীছে এসেছে ثُمَّ لْيَقُلْ ‘অতঃপর সে যেন বলে’। এতে বুঝা যায় যে, সালাম ফিরানোর পরে দো‘আ করবে। ২. একই রাবী বর্ণিত আবুদাঊদের হাদীছে এসেছে وَلْيَقُلْ ‘এবং সে যেন বলে’। এতে বুঝা যায় যে, ছালাতের মধ্যে দো‘আ করবে। [3] অন্যান্য ছহীহ হাদীছে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের মধ্যেই বিশেষ করে সিজদায় এবং শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিশেষ দো‘আ সমূহ করতেন।[4] সে হিসাবে ইস্তেখারাহর দো‘আটিও শেষ বৈঠকে বসে ধীরে-সুস্থে করা বাঞ্ছনীয়। আর যদি সালাম ফিরানোর পরে উক্ত দো‘আ করেন, তাহ’লে বেশী দেরী না করে এবং অহেতুক কোন কথা না বলে সত্বর দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ করবেন এবং শুরুতে হাম্দ ও দরূদ পাঠ করবেন। যেমন আল-হামদুলিল্লাহি রবিবল ‘আ-লামীন, ওয়াছছালাতু ওয়াসসালামু ‘আলা রাসূলিল্লাহিল কারীম, অতঃপর দো‘আ পাঠ করবেন। [5]
ছাহেবে মির‘আত বলেন, ইস্তেখারাহর পরে যেটা প্রকাশিত হয় বা ঘটে যায়, সেটাই করা উচিত। এজন্য তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং স্বপ্ন দেখা বা কাশ্ফ হওয়া অর্থাৎ হৃদয় খুলে যাওয়া শর্ত নয়।[6]
একটি বিষয়ের জন্য একবার ব্যতীত একাধিকবার ‘ছালাতুল ইস্তেখা-রাহ’ আদায়ের কথা স্পষ্টভাবে কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো দো‘আ করলে একই সময়ে তিনবার করে দো‘আ করতেন এবং কিছু চাইলে তিনবার করে চাইতেন।[7]
এই ছহীহ হাদীছের উপরে ভিত্তি করে ইস্তেখারাহর দো‘আ পাঠের উদ্দেশ্যে অত্র ছালাত ইস্তিসক্বার ছালাতের ন্যায় একাধিকবার পড়া যায় বলে ইমাম শাওকানী মন্তব্য করেছেন। ইমাম নববী বলেন, উক্ত দো‘আ পাঠের সময় হৃদয়কে যাবতীয় ঝোঁক প্রবণতা হ’তে খালি করে নিতে হবে এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করতে হবে। নইলে ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে কল্যাণপ্রার্থী না হয়ে বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজারী হিসাবে গণ্য হবে। [8]

[1] . নায়লুল আওত্বার ৩/৩৫৪, ‘ইস্তেখা-রাহ্’র ছালাত’ অনুচ্ছেদ।
[2] . অথবা বলবে, (فِىْ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ অর্থাৎ আমার ইহকাল ও পরকালের জন্য)। বুখারী, মিশকাত হা/১৩২৩ ‘ঐচ্ছিক ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৩৯; আবুদাঊদ হা/১৫৩৮; মির‘আত ৪/৩৬২।
[3] . বুখারী হা/১১৬২, আবুদাঊদ হা/১৫৩৮; মির‘আত ৪/৩৬২।
[4] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪, ৮১৩।
[5] . আবুদাঊদ হা/১৪৮১, ৮৮-৯০; নায়ল ৩/৩৫৪-৫৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৫৮; মির‘আত ৪/৩৬২, ৬৪।
[6] . মির‘আত ৪/৩৬৫।
[7] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪৭, ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, অনুচ্ছেদ-৪।
[8] . নায়লুল আওত্বার ৩/৩৫৬, ‘ইস্তেখা-রাহর ছালাত’ অনুচ্ছেদ।

১৩. ছালাতুত তাসবীহ (صلاة التسبيح)
অধিক তাসবীহ পাঠের কারণে এই ছালাতকে ‘ছালাতুত তাসবীহ’ বলা হয়। এটি ঐচ্ছিক ছালাত সমূহের অন্তর্ভুক্ত।
এ বিষয়ে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি। বরং আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত এ সম্পর্কিত হাদীছকে কেউ ‘মুরসাল’ কেউ ‘মওকূফ’ কেউ ‘যঈফ’ কেউ ‘মওযূ’ বা জাল বলেছেন। সঊদী আরবের স্থায়ী ফৎওয়া কমিটি ‘লাজনা দায়েমাহ’ এই ছালাতকে বিদ‘আত বলে ফৎওয়া দিয়েছে। যদিও শায়খ আলবানী (রহঃ) উক্ত হাদীছের যঈফ সূত্র সমূহ পরস্পরকে শক্তিশালী করে মনে করে তাকে ‘ছহীহ’ বলেছেন এবং ইবনু হাজার আসক্বালানী ও ছাহেবে মির‘আত একে ‘হাসান’ স্তরে উন্নীত বলেছেন। তবুও এরূপ বিতর্কিত, সন্দেহযুক্ত ও দুর্বল ভিত্তির উপরে কোন ইবাদত বিশেষ করে ছালাত প্রতিষ্ঠা করা যায় না বিধায় ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর ‘দারুল ইফতা’ বিষয়টি থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। [1]

[1] . দ্রঃ ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)-এর বিস্তারিত আলোচনা; আলবানী, মিশকাত পরিশিষ্ট, ৩ নং হাদীছ ৩/১৭৭৯-৮২ পৃঃ; আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩২৮ হাশিয়া; বায়হাক্বী ৩/৫২; আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ, মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসআলা নং ৪১৩, ২/২৯৫ পৃঃ; মির‘আত ৪/৩৭২-৭৫; রিয়াদ : লাজনা দায়েমাহ, (صلاة التسبيح بدعة، وحديثها ليس بثابت، بل هو منكر)। ফৎওয়া নং ২১৪১, ৮/১৬৪ পৃঃ।
নিয়ম : দিনে বা রাতে চার রাক‘আত ছালাত এক সালামে আদায় করবে। ১ম রাক‘আতে ক্বিরাআত শেষে সুবহা-নাল্লা-হি, ওয়াল হামদুলিল্লা-হি, অলা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লাহ-হু আকবর ১৫ বার পড়বে। অতঃপর রুকূতে গিয়ে (দো‘আ পাঠ শেষে) উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে। অতঃপর রুকূ থেকে উঠে (সামি‘আল্লাহু লেমান হামিদাহ ও রববানা লাকাল হামদ বলার পর) ১০ বার পড়বে। অতঃপর সিজদায় গিয়ে (দো‘আ পাঠের পর) ১০ বার পড়বে। অতঃপর সিজদা থেকে উঠে (দো‘আ পাঠের পর) ১০ বার পড়বে। অতঃপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে (দো‘আ পাঠের পর) ১০ বার পড়বে। অতঃপর উঠে দাঁড়ানোর পূর্বে বসা অবস্থায় ১০ বার পড়বে (মোট ৭৫ বার)। এইভাবে চার রাক‘আতে সর্বমোট তাসবীহ ৪Î৭৫=৩০০ বার পড়বে। পারলে দিনে একবার, নইলে সপ্তাহে, নইলে মাসে, নইলে বছরে, নইলে জীবনে একবার পড়বে। তাতে আগে-পিছের, জানা-অজানা, ছোট-বড় সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে (আবুদাঊদ হা/১২৯৭-৯৯, ইবনু মাজাহ হা/১৩৮৬-৮৭; ঐ, মিশকাত হা/১৩২৮, ‘ছালাতুত তাসবীহ’ অনুচ্ছেদ-৪০)।
জরুরী দো‘আ সমূহ (الأدعية الضرورية) দো‘আর গুরুত্ব : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‘দো‘আ হ’ল ইবাদত’।[1] আল্লাহ বলেন,اُدْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ، إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ- (غافر60)- ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকার বশে আমার ইবাদত হ’তে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’। এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দো‘আ।[2] আল্লাহ আরও বলেন, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِي وَلْيُؤْمِنُوْا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ- (البقرة 186)- ‘আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে আমার বিষয়ে জিজ্ঞেস করে, তখন বলে দাও যে, আমি তাদের অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে থাকি, যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমার আদেশ সমূহ পালন করে এবং আমার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে। যাতে তারা সুপথ প্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ غَضِبَ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে ডাকে না, তিনি তার উপরে ক্রুদ্ধ হন’। [3] তিনি বলেন, لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ سُبْحَانَهُ مِنَ الدُّعَاءِ ‘মহান আল্লাহর নিকট দো‘আর চাইতে অধিক মর্যাদাপূর্ণ বিষয় আর কিছু নেই’।[4] দো‘আর ফযীলত : হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘মুসলমান যখন অন্য কোন মুসলমানের জন্য দো‘আ করে, যার মধ্যে কোনরূপ গোনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার কথা থাকে না, আল্লাহ পাক উক্ত দো‘আর বিনিময়ে তাকে তিনটির যেকোন একটি দান করে থাকেন। (১) তার দো‘আ দ্রুত কবুল করেন অথবা (২) তার প্রতিদান আখেরাতে প্রদান করার জন্য রেখে দেন অথবা (৩) তার থেকে অনুরূপ আরেকটি কষ্ট দূর করে দেন। একথা শুনে ছাহাবীগণ উৎসাহিত হয়ে বললেন, তাহ’লে আমরা বেশী বেশী দো‘আ করব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ তার চাইতে আরও বেশী দো‘আ কবুলকারী’।[5] এজন্য সর্বদা পরস্পরের নিকট দো‘আ চাইতে হবে। দো‘আ কবুলের শর্তাবলী : (১) শুরুতে এবং শেষে হামদ ও দরূদ পাঠ করা (২) দো‘আ আল্লাহর প্রতি খালেছ আনুগত্য সহকারে হওয়া (৩) দো‘আয় কোন পাপের কথা কিংবা আত্মীয়তা ছিন্ন করার কথা না থাকা (৪) খাদ্য-পানীয় ও পোষাক হালাল ও পবিত্র হওয়া (৫) দো‘আ কবুলের জন্য ব্যস্ত না হওয়া (৬) নিরাশ না হওয়া ও দো‘আ পরিত্যাগ না করা (৭) উদাসীনভাবে দো‘আ না করা এবং দো‘আ কবুলের ব্যাপারে সর্বদা দৃঢ় আশাবাদী থাকা। তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে যে কোন সময় যে কোন বান্দার এমনকি কাফের-মুশরিকের দো‘আও কবুল করে থাকেন, যদি সে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা চায়। নিয়ম : খোলা দু’হস্ততালু একত্রিত করে চেহারা বরাবর সামনে রেখে দো‘আ করবে।[6] দো‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর বিভিন্ন দো‘আ পড়বে।[7] যেমন,আল-হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন, ওয়াছছালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিহিল কারীম’ বলার পর বিভিন্ন দো‘আ শেষে ‘সুবহা-না রবিবকা রবিবল ‘ইযযাতি ‘আম্মা ইয়াছিফূন, ওয়া সালা-মুন ‘আলাল মুরসালীন, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি রবিবল ‘আ-লামীন’ পাঠ অন্তে দো‘আ শেষ করবে। দো‘আর আদব : (১) কাকুতি-মিনতি সহকারে ও গোপনে হওয়া।[8] (২) একমনে ভয় ও আকাংখা সহকারে এবং অনুচ্চ শব্দে অথবা মধ্যম স্বরে হওয়া।[9] (৩) সারগর্ভ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া।[10] দো‘আ কবুলের স্থান ও সময় : আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’।[11] এতে বুঝা যায় যে, যে কোন স্থানে যে কোন সময় যে কোন ভাষায় আল্লাহকে ডাকলে তিনি সাড়া দিবেন। তবে ছালাতের মধ্যে আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় দো‘আ করা যাবে না। দো‘আর জন্য হাদীছে বিশেষ কিছু স্থান ও সময়ের ব্যাপারে তাকীদ এসেছে, যেগুলি সংক্ষেপে বর্ণিত হ’ল : (১) কুরআনী দো‘আ ব্যতিরেকে হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহের মাধ্যমে সিজদায় দো‘আ করা (২) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে (৩) জুম‘আর দিনে ইমামের মিম্বরে বসা হ’তে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কালে (৪) রাত্রির নফল ছালাতে (৫) ছিয়াম অবস্থায় (৬) রামাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ বেজোড় রাত্রিগুলিতে (৭) ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে উঠে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে (৮) হজ্জের সময় আরাফা ময়দানে দু’হাত উঠিয়ে (৯) মাশ‘আরুল হারাম অর্থাৎ মুযদালিফা মসজিদে অথবা বাইরে স্বীয় অবস্থান স্থলে ১০ই যিলহাজ্জ ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত দো‘আ করা (১০) ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহাজ্জ তারিখে মিনায় ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর একটু দূরে সরে গিয়ে দু’হাত উঠিয়ে দো‘আ করা (১১) কা‘বাগৃহের ত্বাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে। (১২) ‘কারু পিছনে খালেছ মনে দো‘আ করলে, সে দো‘আ কবুল হয়। সেখানে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন। যখনই ঐ ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য দো‘আ করে, তখনই উক্ত ফেরেশতা ‘আমীন’ বলেন এবং বলেন তোমার জন্যও অনুরূপ হৌক’।[12] এতদ্ব্যতীত অন্যান্য আরও কিছু স্থানে ও সময়ে। তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিত কবুল হয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তির দো‘আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়, এতে কোন সন্দেহ নেই (১) মাযলূমের দো‘আ (২) মুসাফিরের দো‘আ (৩) সন্তানের জন্য পিতার দো‘আ।[13] তিনি বলেন, ‘ তোমরা মাযলূমের দো‘আ হ’তে সাবধান থাকো। কেননা তার দো‘আ ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা নেই’। [14] [1] . তিরমিযী, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/২২৩০ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-২। [2] . গাফের/মুমিন ৪০/৬০; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৬৬-এর ব্যাখ্যা, ‘দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৩৫২। [3] . ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৭ ‘দো‘আ’ অধ্যায়-৩৪, ‘দো‘আর মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ-১। [4] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, হাদীছ হাসান, মিশকাত হা/২২৩২, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-২। [5] . আহমাদ, হাকেম, মিশকাত হা/২২৫৯ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯; সনদ হাসান -আলবানী; হাদীছ ছহীহ, আহমাদ হাসান দেহলভী, তানক্বীহুর রুওয়াত ফী তাখরীজি আহাদীছিল মিশকাত (লাহোর: দারুদ দা‘ওয়াতিস সালাফিইয়াহ, ১৯৮৩), ২/৬৯ পৃঃ। [6] . আবুদাঊদ হা/১৪৮৬-৮৭, ৮৯; ঐ, মিশকাত হা/২২৫৬ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [7] . আবুদাঊদ হা/১৪৮১; তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৩০-৩১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬; আলবানী, ছিফাত ১৬২ পৃঃ। [8] . আ‘রাফ ৭/৫৫। [9] . আ‘রাফ ৭/৫৬, ২০৫; যুমার ৩৯/৫৩-৫৪; ইসরা ১৭/১১০। [10] . আবুদাঊদ হা/১৪৮২; ঐ, মিশকাত হা/২২৪৬, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯। [11] . গাফের/মুমিন ৪০/৬০। [12] . মুসলিম, মিশকাত হা/২২২৮, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-১। [13] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২২৫০, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, পরিচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৫৯৬। [14] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৭২, ‘যাকাত’ অধ্যায়-৬, পরিচ্ছেদ-১।

Post a Comment

  1. Merkur Gold Strike Safety Razor - FEBCASINO
    Merkur's Gold Strike Safety Razor, https://vannienailor4166blog.blogspot.com/ Merkur Platinum febcasino Edge Plated 출장안마 Finish, https://febcasino.com/review/merit-casino/ German, Gold-Plated, Satin Chrome Finish. Merkur has a kadangpintar more aggressive looking,

    ReplyDelete

Please Comment Below. One Comment From You Impressing Me. Thank You!

 
Top